Wednesday, September 11, 2019

মজার একটি গল্প ।

বাসের ভিতর কে যেনো পাদ দিছে। গ্রামাঞ্চলে বাড়ির আশেপাশে কুত্তা মরা পড়ে থাকলে যেমন গন্ধ বের হয়, ঠিক তেমনি একটা বোটকা গন্ধ বের হয়েছে। প্রথম দিকে কয়েকজন দেখলাম নাক কুঁচকাচ্ছে, এখন রুমাল-শার্টের হাতা যার যা আছে তাই দিয়ে নাক চেপে আছে। গন্ধটা বাতাসের প্রতিটা অনুতে মিশে বাসের ভিতরে ছড়িয়ে পরেছে। ধারনা করা হচ্ছে ব্যাপারটা বাসের সামনের দিকে ঘটেছে। যেহেতু সামনের দিকে মহিলা সিট, তাই কেউ কোন উচ্চবাচ্য করছেনা। একজন আরেকজনের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।
বাসের সামনের দিকে দরজার পাশে মহিলা সিটে বসে ছিল বেশ ছিমছাম সুন্দরি এক মেয়ে। বাতাসে মেয়েটির চুল উড়ছিল। মেয়েটি একটি বই পড়ছিল। 

আজ সম্ভবত মেয়েটির পরীক্ষা আছে। বিদেশে বাসে ট্রেনে মানুষ গল্প উপন্যাস পড়ে। ঢাকার বাসে সেটা আদিখ্যেতা ছাড়া কিছুই না। বাসের চাপাচাপি আর গরমে দম ফেলাই যেখানে দুষ্কর সেখানে বাধ্য না হলে টেক্সট বইও কেউ পড়ে না।
আমি মেয়েটির দিকে একবার তাকিয়েছি যখন মেয়েটি বাসে উঠেছে। বাস তখন মোটামুটি ফাঁকা ছিল। প্রতিজ্ঞা করেছি কোন মেয়ের দিকে তাকাব না। ইদানিং চোখের দৃষ্টি হেফাজতের চেষ্টা করছি। প্রথমে কিছুক্ষন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম। তারপর থেকে আর হেফাজত সম্ভব হয়নি, অবাধ্য চোখ ঘুরেফিরে সেই মেয়ের দিকেই যাচ্ছিল। পাদ কেলেংকারির আগ পর্যন্ত যতবার মেয়েটির দিকে তাকিয়েছি তত টাকা পকেটে থাকলে এই গরমে বাসে করে যেতে হতো না। মেয়েটি এখন বইটি মুখে চেপে আছে। এই মেয়ে পাদ মারতেই পারে না, আমি দলিলে লিখে দিতে পারি।
Funy history-Easy tips for life

মেয়েটির বাম পাশে বসেছে স্থুলকায় এক মহিলা। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হবে। মহিলা ভারি সাজ সেজেছেন। কপালে আবার লম্বাটে আরবি অক্ষরের আলিফের মত টিপ এঁকেছেন। ঘেমে মুখের সাদা মেক আপ কাদাটে হয়ে গেছে। মহিলার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি মুখের রংয়ের সাথে কোন মিল নেই। শাড়ি পরেছেন, পেট বের হয়ে আছে। দেখতে বিচ্ছিরি দেখাচ্ছে। আমার ধারনা পাদটা এই মহিলাই মেরেছে। শাড়ির আঁচল মুখে চেপে আছে, যেন খুকুটি পাদ মারতেই পারে না। আমি দলিলে লিখে দিতে পারি পাদটা এই মহিলাই মেরেছে।

সামনের দিকে বসে আছে টাক মাথার এক ভদ্রলোক। তিনি কিছুক্ষন আগে হকারের কাছ থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকা কিনেছেন। তিনি পত্রিকায় ডুবে আছেন। টাক মাথা আর পত্রিকা ধরা বাম হাত ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তার পাশে জানালার সিটে বসেছেন ছোটখাট মাঝবয়সী এক ভদ্রলোক। বাসে উঠার সময় দেখিছি তিনি ঘুমিয়ে আছেন। এখন জেগেছেন কিনা জানি না, হয়ত পাদের গন্ধে মরেই গেছেন।

তাদের পরের সিটে বসেছে দুই কলেজ পড়ুয়া ছেলে। গলায় কলেজের নামের ফিতা ঝুলছে। ওরা দুজন মোবাইলে মিনি মিলিশিয়া খেলছিল। কন্ডাকটর হাফ ভাড়া নিতে রাজি হয়নাই তাই কলেজের সামনে গেলেই দেখে নিবে বলে হুমকি দিয়েছে। দুই চারটা চ বর্গীয় গালি বিনিময়ের পরে কন্ডাকটর হাফ ভাড়াই নিয়েছে। আমিও ভাবলাম বিশ্বজুড়ে পাঠশালা মোড় সবার আমি ছাত্র হিসেবে হাফ ভাড়া দিব, বেইজ্জত হবার ভয়ে আর সাহস করে বলতে পারিনি। ছেলে দুইটা ব্যাগের চেইন খুলে তার মধ্যে মুখ গুঁজে আছে এখন।

তাদের বামপাশের দুই সিটে বসেছেন এক হুজুর আর তার স্ত্রী। হুজুরের দাঁড়ি ভুঁড়ি দুইটাই আছে। হুজুরদের বউ সুন্দরী হয়। এই হুজুরের বউও সুন্দরিই হবে। দেখার উপায় নেই। বোরখা পরেছে। চোখের সামনে দিয়েও একটা পর্দা দেয়া। হুজুর একটু পর পর তার স্ত্রীর কানের কাছে মুখ নিয়ে কি যেন বলেন আর খেক খেক করে হাসেন। হুজুর এই মুহুর্তে তার টুপি খুলে মুখে চেপে ধরে আছেন।
তাদের পিছনের সিটে আমি বসেছি। আমার পাসে বসেছেন খবিশ টাইপের এক জঘন্য ভদ্রলোক। প্রথমে তিনি নখ দিয়ে নাকের ময়লা পরিষ্কার করছিলেন। নাকের ময়লা বের করে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকেন তারপরে সামনের সিটে মুছে ফেলেন। এই মুহূর্তে তিনি নখ কামড়াচ্ছেন।

আমার পেছনের সিটে বসেছেন দুই জন শার্ট-ইন টাই পরা ভদ্রলোক। দুজনের হাতেই অফিস ব্যাগ। তারা এতক্ষন ডানহাত বামহাত নিয়ে আলোচনা করছিলেন। চিটাগাংয়ের সাতকানিয়ায় তাদের MLM কোম্পানি গাছের চাড়া রোপণ করেছে, সেই গাছ তাদের কাছে বিক্রি করেছে। দশটি চাড়া পাঁচ হাজার টাকা। দশ বছর পরে এই গাছ বিক্রি করে কোম্পানি তাদের দিবে ত্রিশ হাজার টাকা। এছাড়াও ডানহাত বামহাত খেলে কিভাবে তারা কোটিপতি হবে এবং তাদের কোন কোন লিডার কি কি ছিঁড়েছে সেই আলোচনাও হচ্ছিল। এই মুহুর্তে তারা নাকে রুমাল চেপে আছেন। দুজনের রুমাল একই কালারের।

তাদের পিছনে বসেছেন এক গ্রাম্য ভদ্রলোক। তার বেশভূষায় বুঝা যাচ্ছে গ্রাম থেকে খুব বেশি তিনি শহরে আসেননি। তার পাশে একটি সিলভারের পাতিল রাখা। পাতিলার ভিতর থেকে মাছের ছটফটানির আওয়াজ আসছে। পাদের গন্ধে মাছও ছটফট করছে।
এরই মধ্যে সামনের সিটের মোটা মহিলাটা বমি করে দিলেন। বমি যেয়ে পরল ড্রাইভারের গায়ে। ড্রাইভার সাইডে গাড়ি থামিয়ে দিলেন। মোটা মহিলাটা উপুড় হয়ে পরে গেল। সম্ভবত অজ্ঞান হয়ে গেছে। আমি সিট থেকে উঠলাম মহিলাকে সাহায্য করতে। এইতো সুযোগ সামনের সিটের সুন্দরির সামনে হিরো হবার। আমি এক পা আগাতেই কি যেন হলো। আর কিছু মনে নেই।

এরপর নিজেকে আবিষ্কার করি হাসপাতালে। ঘটনা যতদূর জানলাম পাদের গন্ধে কেউ অজ্ঞান হয়নি। সামনের সিটের ঘুমন্ত ভদ্রলোক একজন ল্যাব প্রফেসর ছিলেন। তার সাথে ছোট একটি হাইড্রোজেন সালফাইডের সিলিন্ডার ছিল যেটা বাসের ধাক্কায় পরে গিয়ে গ্যাস লিক করে। হাইড্রোজেন সালফাইড একটি গন্ধযুক্ত টক্সিক গ্যাস। তিনজন অজ্ঞান হওয়ায় হাসপাতালে এনেছে, আমি যাদের মধ্যে একজন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

ডান পাশে তাকিয়ে দেখি পাশের বেডে সেই সুন্দরি ঘুমিয়ে আছে। ওয়ার্ডের ফ্যানের বাতাসে সামনের কয়েকটি চুল উড়ছে। ইচ্ছে করছে যেয়ে চুলগুলো সরিয়ে দেই। ঘুমন্ত মেয়েদের চেহারা এত নিষ্পাপ হয় জানা ছিল না। আমি মোবাইলে মেয়েটির একটি ছবি তুলে রাখি। হয়ত কথা হবেনা, হয়ত আর দেখা হবে না। দ্বিতীয় এই দেখাটাই কম কি?

তাহলে তৃতীয় ব্যক্তি কে অজ্ঞান হয়েছিল? বাম পাশে কাত হতেই সেই মোটা মহিলাটা জিজ্ঞেস করলেন, “ভাই, পাদটা কোন হারামির বাচ্চা মারছিল?

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.