বাবা যেদিন বাজার থেকে আধা সের গরুর গোস্ত কিনে আনতো সেদিন আমাদের ঘরে একটা বড় উৎসব আমেজ ভাব চলে আসত।
মা শাড়ির আচলকে কোমড়ে গুজে জিরা মসলা বাটতে বসে যেতেন। আমি কাচা গোস্ত গুলোকে নেড়ে চেড়ে দেখতাম,মুখের কাছে নিয়ে গেলেই মা বকা দিত।বলত "কাচা গিলে খাসনে,পেটে গরু হবে"।
আমি চোখ ড্যাব ড্যাব করে মা কে বলতাম "গরু হলে বেশ হবে মা, রোজ ই তো তাহলে গোস্ত খেতে পারবো।
মা আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে হাসি মুখ করে বলত "আমার কলিজার টুকরা"।
খানিকটা দূরে বসে মা ছেলের খুনসুটি দেখে বাবা ঠোটের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে হাসতেন।
একসময় নুনে,মরিচে মিশিয়ে মা ঝোল ঝোলকরা গোস্ত চুলা থেকে নামাতেন। আমি দৌড়ে হামলে পড়তাম।একটা চামচে এক টুকরো আমায় বাড়িয়ে দিয়ে মা বলতেন -"ধর খোকা, নুন হয়েছে কিনা দেখ"। আমি প্রথম টুকরো খেয়ে দুষ্ট গাল করে বলতাম -"এক টুকরোয় কি বুঝা যায়? আরেক টুকরো দাও না মা, খেয়ে ঝটপট বলে দিই। মা আরেক টুকরো দিত। আমিও খেতাম।
মা শাড়ির আচলকে কোমড়ে গুজে জিরা মসলা বাটতে বসে যেতেন। আমি কাচা গোস্ত গুলোকে নেড়ে চেড়ে দেখতাম,মুখের কাছে নিয়ে গেলেই মা বকা দিত।বলত "কাচা গিলে খাসনে,পেটে গরু হবে"।
আমি চোখ ড্যাব ড্যাব করে মা কে বলতাম "গরু হলে বেশ হবে মা, রোজ ই তো তাহলে গোস্ত খেতে পারবো।
মা আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে হাসি মুখ করে বলত "আমার কলিজার টুকরা"।
খানিকটা দূরে বসে মা ছেলের খুনসুটি দেখে বাবা ঠোটের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে হাসতেন।
একসময় নুনে,মরিচে মিশিয়ে মা ঝোল ঝোলকরা গোস্ত চুলা থেকে নামাতেন। আমি দৌড়ে হামলে পড়তাম।একটা চামচে এক টুকরো আমায় বাড়িয়ে দিয়ে মা বলতেন -"ধর খোকা, নুন হয়েছে কিনা দেখ"। আমি প্রথম টুকরো খেয়ে দুষ্ট গাল করে বলতাম -"এক টুকরোয় কি বুঝা যায়? আরেক টুকরো দাও না মা, খেয়ে ঝটপট বলে দিই। মা আরেক টুকরো দিত। আমিও খেতাম।
স্বাদ করে খেতাম। আর মায়ের শাড়ির আচলে আয়েশ করে মুখ মুছতাম।
এইতো সেদিন বাবা এক পোয়া গোশত এনেছিল। এত কম এনেছো কেন জানতে চাইলে বাবা মুখ মলিন করে বলেছিল "আজকের গরুটা তোর মত বাচ্চা, তাই গোস্ত কম হয়েছে"।
সবে এক দুই গুণতে শিখেছি। মা যখন মসলা বাটায় ব্যস্ত তখন গোস্ত গুলো ধরতে ধরতে আনমনে গুণে দেখলাম মোট পনের টুকরো গোস্ত আছে।
একসময় মা আলু মাখিয়ে ঝোল করে গোস্ত রাধে। তিন টুকরো আমায় দেয় নুন মরিচ পরখ করার জন্যে। আমি খেতে খেতে হিসেব রাখি আর বারো টুকরো আছে।
রাতে মা প্লেটে করে আরো পাঁচ টুকরো ভাত মাখিয়ে নলা করে আমায় খাওয়ায়। আমি খেতে খেতে হিসেব রাখি আর সাত টুকরো আছে।
এরপরের দিন সকালেও আমার প্লেটে গোস্ত আসে।দুপুরেও গোস্ত আসে।
খেতে খেতে হঠাত হিসেবে গন্ডগোল বেঁধে যায়। হিসেব করে দেখলাম বারো টুকরো গোস্ত ই আমার পেটে।
বাবা খায়নি, মা ও খায়নি।
অনেক বছর পর আমি যখন অংক করানো শিখলাম।হঠাত অংক করতে করতে একদিন একটা নিজের অংক মিলালাম-
এক পোয়া গোস্তে যদি পনের টুকরো হয়। তবে আধা কেজি গোস্তে তিরিশ টুকরো।
যদি পাচ টুকরো করে ভাগ করা হয় তবে তিনজনে দুই বেলা খেতে পারবে। কিন্তু যেবার বাবা আধা কেজি গোস্ত আনতেন প্রত্যেক বার ই আমার ভাগে পাঁচ টুকরো করে মোট ছয় বেলা গোস্ত জুটত।
পাঁচ টুকরো করে ছয় বেলা।
অংকটার উত্তর:-
"বাবা-মা কোনদিন ই গরুর গোস্ত খান নি"
অংকটার মন্তব্য:-
অথচ গরুর গোস্ত বাবার ভীষণ প্রিয় ছিল।
অথচ গরুর গোস্ত মায়ের ভীষণ প্রিয় ছিল।
আজ আমার ৪ তলা ফ্লাটে থাকি তিনজন। আমি, আমার স্ত্রী ও ছেলে। প্রতিদিনই প্রায় গোস্ত কেনা হয়। আগের মত আধা কেজি না। ২ কেজি, ৩ কেজি। কিন্তু আগের মত সেই উচ্ছাস আর নেই, নেই মায়ের হাতের রান্নার সেই স্বাদ, নেই বাবার মুচকি হাসির মাঝে অফুরন্ত ভালবাসা।
মা বাবা দুজনেই আজ পরপারে
ভালো থাকুক সবার মা সবার বাবা
"রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা। হে আল্লাহ্ শিশুকালে আমার মা বাবা যেমন স্নেহ মায়া মমতা ভালোবাসা দিয়ে লালন করেছিলেন, তুমিও তাঁদের সে ভাবেই লালন কর"
গল্পটি হৃদয় স্পর্শ করলো তাই শেয়ার করলাম।
আমার পিতা মাতার জন্য দোয়া করবেন ,আমাদের সকলের পিতা মাতাকে আল্লাহ জান্নাত দান করুন ! ____________আমিন